পিরোজপুর জেলার কৃষি :
বোরো, আমন ও রোপা আমন ধান এ জেলার প্রধান ফসল। অর্থকরী ফসলের মধ্যে কলা, পান, পেয়ারা, আমড়া, নারিকেল ও সুপারির আবাদ সবিশেষ উলেখযোগ্য। এখানে শীতকাল স্বল্পমেয়াদী বলে গমের আবাদ এই জেলায় সীমিত। অন্যান্য ফসলের মধ্যে ডাল জাতীয় শস্য, কলা, মরিচ, পান, তেজপাতা ও শাকসব্জি এখানে যথেষ্ট পরিমাণ উৎপন্ন হয়।
দেশের সর্বত্র সুপরিচিত ও সমাদৃত নেছারাবাদের (স্বরূপকাঠি) পেয়ারা এবং বরিশালের আমড়া এখানে উলেখযোগ্য ভাবে উৎপাদিত হয়। এ জেলায় অল্প বিস্তরে ভূট্টা চাষ হয়।
পিরোজপুরের জলবায়ু
পিরোজপুরের জেলার জলবায়ু নাতিশীতোষ্ণ। কোথাও উষ্ণতার প্রচন্ডতা বা শীতের তীব্রতা নেই। এ জেলার অধিবাসী ষড়ঋতুর মধ্যে শীত, গ্রীষ্ম এবং বর্ষার প্রভাবে বেশি প্রভান্বিত। বছরে গড়ে ৬০ থেকে ৭৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। গড়ে তাপমাত্রা ৭৫.৯৩২ ডিগ্রি ফারেনহাইট। পিরোজপুরের অদূরে দক্ষিণ দিকে বঙ্গোপসাগর। ফলে আবাহাওয়া কিছুটা লবণাক্ত এবং উষ্ণতা নিয়ন্ত্রিত। বছরের প্রায় আটমাস উত্তর পশ্চিমে বাতাস বহমান থাকে। অদূরে বঙ্গোপসাগর এবং অভ্যমত্মরে অসংখ্য নদীনালা, বিল-ঝিল থাকার কারণে প্রবাহিত বাতাস ঠান্ডা এবং নির্মল থাকে।
পিরোজপুরের জোঁয়ার-ভাটা
পিরোজপুরের সন্নিকটে দক্ষিণদিকে বঙ্গোপসাগর। অন্যদিকে অসংখ্য নদ-নদী বেষ্টিত, খাল-বিল-ঝিল পূর্ণ জল মেখলা ভূষিত পিরোজপুর। বিশাল জলভাগ সংশিস্নষ্ট পিরোজপুরের নদনদীতে দিনরাত ২৪ ঘণ্টার দু’বার জোঁয়ার-ভাটা হয়। জোঁয়ার-ভাটার স্থায়িত্বকাল প্রতিবারে ৬ ঘন্টা। পিরোজপুর অঞ্চলে বর্ষাকালীন সময়ে জোয়ারের বেগে ১০-১৫ ফুট পানির স্ফীতি বা ফুলে ওঠা পরিলক্ষিত হয়। বছরে অন্যান্য সময় জোয়ার-ভাটার বেগ এবং স্থায়িত্বের সময় দীর্ঘায়িত হয়। নিমণ অঞ্চল আষাড় মাস থেকে অক্টোবর পর্যমত্ম পানিমগ্ন থাকে। পিরোজপুরের অঞ্চলের প্রাচীন নদীগুলো সংকুচিত হয়ে বহু সংখ্যক বিলের সৃষ্টি হয়েছে। এ জেলার বিল-ঝিলের মধ্যে নেছারবাদ থানার (স্বরূপকাঠী) ‘আটঘর’ এবং ‘কুড়িয়ানা’ এবং নাজিরপুর থানার ‘দেউলবাড়ী-দোবড়া ও ঝনঝনিয়া’ প্রধান। প্রাকৃতিক কারণে বিল-ঝিলের সৃষ্টি হয়েছে বলে ঐতিহাসিকগণ অনুমান করেছেন। ঐতিহাসিকগণ এইচ, বিভারিজ আরও অনুমান করেছেন যে, ১৭৬৩ সালে ঝড় এবং ভূমিকম্পে ভান্ডারিয়া থানার চেচরীরামপুরে বিলের সৃষ্টি হয়েছে।
পিরোজপুর জেলার পশু- পাখির কথা
জেলায় গৃহপালিত ও গবাদিপশুর মধ্যে গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া আছে। এছাড়াও কোথাও কোথাও শুকর পালন করা হয়। বন্যপ্রাণীর মধ্যে খেকশিয়াল, খাটাস,বেজী , উদবিড়াল প্রভৃতি বর্তমানের প্রতিকুল পরিবেশ মোকাবেলা করে এখনও টিকে আছে। প্রায় লুপ্ত হয়ে যাওয়া প্রাণীকুলের মধ্যে রয়েছে কাঠবিড়ালী, খরগোশ, সজারু, মেছোবাগ, বাঘডাস, লাফারু, ভেঁদর, গুইসাপ ইত্যাদি।
এ জেলায় বিভিন্ন গৃহপালিত পাখির মধ্যে রয়েছে হাঁস-মুরগি, কবুতর, তিতির ও কোয়েল। এছাড়া অন্য পাখির মধ্যে রয়েছে- জলাভূমির ডাহুক, নলগোগা, কানিবক, চ্যাগা, কাদাখোঁচা, জলপিপি, পানকৌড়ি, গগনবেড় (লুপ্তপ্রায়) গোবক, কাচিখোচা(লুপ্তপায়), মানিকজোড়, হারগিলা, মাছরাঙ্গা, কাচিচোরা ইত্যাদি। এছাড়া কোকিল, বৌকথা কও, লক্ষ্মী পেঁচা, গুতোম পেঁচা, কালো পেঁচা, নীলকণ্ঠ (লুপ্ত), কাঠঠোকরা বা বসমত্ম বাঊরী, চড়ুই, বাবুই, মুনিয়া, টুনটুনি, বাবুই, চিল, টিটি, হরিয়াল, ঘুঘু, রাজঘুঘু, দলঘুঘু, তিলাঘুগু, কোড়া, ইত্যাদি কমবেশি দেখা যায়।
এছাড়া পিরোজপুর জেলায় শীতের অতিথি পাখির আনাগোনার ইতিহাস অনেক বছরের। জেলার নাজির ও স্বরূপকাঠীসহ অন্যান্য এলাকায় শীত মৌসুমে ডুবুরী হাঁস, চখাচখি, বালিহাঁস, শামুকভাঙ্গা, সারস, মদনটক,ডোমকুর ইত্যাদি জাতের পাখির আগমন ঘটে।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস